ব্রণ কেনো হয়? দ্রুত ব্রণ দূর করার উপায় সমূহ
রূপচর্চার একটি আতঙ্কের নাম হলো ব্রণ। সব বয়সী তরুণ-তরুণীরা মুখের ব্রণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। আমাদের সবারই কম-বেশি ব্রণ হয়ে থাকে। মুখে গোটা বা ব্রণ হওয়াটা খুবই সাধারণ একটা সমস্যা। কিন্তু যখন এই সমস্যা হয় তখন জীবন অতিষ্ট করে দেয়। ব্রণ যে শুধু মুখেই হয় তা নয়। শরীরের যে কোনো জায়গায় ব্রণ হতে পারে। তাই ব্রণ নিয়ে যন্ত্রণার শেষ নেই। মুখের সৌন্দর্য নিমিষেই শেষ হয়ে যায় ব্রণে। একটু সচেতন থাকলেই কিংবা কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করলেই ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে ব্রণ বেশি হয়ে গেলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
ব্রণ হওয়ার কারণ
বিশেষজ্ঞরা ব্রণ হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটা কারণকে প্রধান হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ত্বকের গ্রন্থি থেকে সেবাম নামের এক ধরণের তেল বের হওয়া। এর মধ্যে প্রধান হলো হরমোন ক্ষরণের অভাব, জীবাণুর সংক্রমণ, ত্বকের অযত্ন, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, ঘুম না হওয়া, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া ইত্যাদি। এছাড়াও আমরা না জেনেই ভুল পণ্য ব্যবহারের কারণে ত্বকে ব্রণ দেখা দেয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন করা ব্রণ থেকে মুক্ত থাকার প্রধান শর্ত।
যেভাবে ব্রণ দূর করবেন
ত্বক থেকে ব্রণ খুব সহজেই দূর করা সম্ভব। কেননা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই ব্রণ থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখার একমাত্র মূলমন্ত্র। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নির্দিষ্ট সময় ঘুমানো, ত্বক সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং ত্বকের যত্নে সঠিক পণ্য ব্যবহার করাই আপনাকে ব্রণের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। তবে বিশেষ কিছু ব্যাপার লক্ষ্য রাখলে অতি সহজেই ব্রণ দূর করা সম্ভব।
১। ত্বক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা
বাড়ির বাইরে বা আপনি যখনই সুযোগ পাবেন ঠিক তখনই পানি দিয়ে ত্বকের উপরিভাগ ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এতে করে আপনার ত্বক যেমন পরিষ্কার ও তরতাজা থাকবে ঠিক তেমনি কমবে জীবাণুর সংক্রমণ। ফলে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমবে। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে মেনে চলতে হবে। কারণ তৈলাক্ত ত্বকে ময়লা বেশি জমে থাকে। তাই তাদেরকে একটু বাড়তি যত্ন নিতে হয়।
২। পর্যাপ্ত ঘুম
একজন সুস্থ্য মানুষের জন্য ৬-৮ ঘন্টা ঘুমানোর পরামর্শ চিকিৎসকেরা দিয়ে থাকেন। এর থেকে কম ঘুমালে মানুষের বিভিন্ন ধরণের সমস্যা হয়ে থাকে। কারো কারো ক্ষেত্রে এর বেশি সময়ও ঘুমের প্রয়োজন হতে পারে। তবে সাধারণত ৬ ঘন্টার চেয়ে কম এবং ৮ ঘন্টার বেশি না ঘুমানোই ভালো। এজন্য আপনাদেরকে নিয়ম করে নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যেতে হবে এবং প্রত্যেক দিন একই সময় ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করতে হবে। এতে প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণ এবং তৈরি হয়ে থাকে। শরীরের কাজগুলো ঠিকমতো ঘটতে থাকবে। ফলে ব্রণ হবে না।
৩। পর্যাপ্ত পানি
পানি ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। তাই তো পানির অপর নাম জীবন বলা হয়ে থাকে। একজন সুস্থ্য মানুষের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। আপনাকে সকাল শুরুই করতে হবে পানি পান করার মধ্য দিয়ে। সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। যাতে করে আপনার শরীরে পানির অভাব তৈরি হতে না পারে।
৪। লেবুর রস
লেবুর রস মাখিয়ে রাতারাতি ব্রণ দূর করা যায়। সেজন্য একটি তুলার বল নিন। তুলাটিতে লেবুর রস মাখান। লেবুর রসের সাথে দারুচিনির মিশ্রণ তৈরি করতে পারেন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সেটা ব্রণের উপর ভালো করে লাগিয়ে রাখতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে হালকা উষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে পারেন।
৫। গ্রিন-টি
গ্রিন-টি গোটা বা ব্রণের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকেন। গরম পানি দিয়ে গ্রিন-টি তৈরি করে নিন। তারপর সেই গ্রিন-টি একদম ঠান্ডা করে ব্রণের জায়গায় ব্যবহার করুন। তুলায় ভিজিয়ে গ্রিন-টি ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভালো করে ত্বকের ওপর মিশতে পারবে চায়ের মিশ্রণটি। ২০ মিনিট রাখার পর তা ধুয়ে ফেলুন।
৬। টি ট্রি অয়েল
টি-ট্রি অয়েলকে ব্রণের শত্রু বলা হয়ে থাকে। এটা দ্রুত ব্রণ কমিয়ে দেয়। রাতারাতি ব্রণ কমাতে প্রথমে ফেসওয়াস দিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে নিন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক ফোঁটা টি-ট্রি অয়েল ব্রণের উপর লাগিয়ে নিন। সকালে ঘুম থেকে জেগে সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ব্রণ কমে গেছে। তারপর একটি পাতলা কপড়ে বরফ মুড়ে ব্রণের উপর সেঁক দিন। এতে আপনার ব্রণের ফোলাভাব কমে যাবে।
ব্রণের দাগ দূর করবেন যেভাবে
ব্রণ নিয়ে যন্ত্রণার শেষ নেই। মুখের সৌন্দর্য নিমিষেই শেষ হয়ে যায় ব্রণে। অনেক সময় ব্রণ ভালো হওয়ার পরেও গর্ত দেখা যায় এবং মুখে কালো দাগ পড়ে যায়। এই দাগ নিয়ে অনেকেই চিন্তায় পড়ে যান। আর অনেকেই না বুঝে বাজার থেকে বিভিন্ন ধরণের কসমেটিকস কিনে এনে ব্যবহার শুরু করে দেন। এই কাজটি যদি করে থাকেন তবে আজই বাদ দিয়ে দিন। কারণ ব্রণ আর ব্রণের দাগ দূর করা এক বিষয় নয়। আসুন জেনে নেই যেভাবে ব্রণের দাগ দূর করবেন-
(ক) ত্বকের দাগ দূর করতে ভিটামিন-সি খুবই কার্যকর। ভিটামিন-সি ত্বকে খুব ভালো কাজ করে থাকে। এটা ত্বক পরিষ্কার করে, ত্বকের ক্ষতি এবং দাগ কমাতে সহায়তা করে। আপনি নিজেই ভিটামিন-সি সিরাপ ব্যবহার করতে পারেন।
(খ) অতিরিক্ত রোদে যাওয়া যাবে না। এতে করে দাগ আরও বেশি ফুটে উঠে। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। যদি একান্তই ঘর থেকে বের হতেই হয় তাহলে ’সানব্লক’ ব্যবহার করবেন। সানব্লক হলো সূর্যের আলো থেকে ত্বকের সুরক্ষায় ব্যবহার করা হয়।
(গ) ত্বকের দাগ খুব বেশি গভীর হলে এবং কোনো কিছু ত্বকে ঠিক মতো কাজ না করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। ত্বক এবং দাগের ধরন বুঝে চিকিৎসা নিতে হবে।
শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায়, মানুষের ত্বক একটি মূল্যবান সম্পদ। ত্বকের প্রতি একটু বাড়তি যত্ন নেওয়াটা আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত। ব্রণ খুবই সংবেদনশীল! তাই বাড়তি যত্ন না নিলে ত্বকের অবস্থা অধিক খারাপ হবার সম্ভাবনা থাকে। ব্রণের সমস্যায় চিন্তিত হওয়ার তেমন কোনো কারণ নেই। তবে বেশি হয়ে গেলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
# কিভাবে ওজন কমানো যায়? দ্রুত ওজন কমানোর সহজ উপায় # কিভাবে মোটা হওয়া যায়? মোটা হওয়ার সহজ উপায়!
[…] ব্রণ কেনো হয়? দ্রুত ব্রণ দূর করার উপায় … […]